Bengali biography of netaji subhas chandra bose
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী | Netaji Subhas Chandra Bose Biography Jagged Bengali
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কে ছিলেন? Who is Netaji Subhas Chandra Bose?
সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। তার বিখ্যাত উক্তি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে।
জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন।
তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন। উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরুসহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তাকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তিনি ভারতে ফিরে এলে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী – Netaji Subhas Chandra Bose Curriculum vitae In Bengali
নাম | সুভাষচন্দ্র বসু |
উপাধি | নেতাজি |
কে ছিলেন | 1.
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম একজন সংগ্রামী। |
পিতার নাম | জানকীনাথ বসু |
মাতার নাম | প্রভাবতী বসু |
রাজনৈতিক গুরু | চিত্তরঞ্জন দাশ |
জন্ম তারিখ | ২৩-শে জানুয়ারি, ১৮৯৭ |
জন্ম স্থান | ওড়িশার কটক শহরে |
শিক্ষা | ব্যাচেলর অফ আর্টস (B.A) |
বিদ্যালয় | 1.
র্যাভেনশো কলেজিয়েট স্কুল, কটক, ওড়িশা, ভারত। প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুল। |
বিশ্ববিদ্যালয় | 1. প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা 2. স্কটিশ চার্চ কলেজ 3. ফিটজউইলিয়াম কলেজ |
বিখ্যাত স্লোগান | 1. “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” 2. “দিল্লি চলো” |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু ধর্ম |
জাতি | বাঙালি |
মৃত্যু | ১৯৪৫ সালের ১৮-ই আগস্ট (মনে করা হয়) |
এ আমাদের করুন
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রথম জীবন
সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি পরাধীন ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কটকে শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম জানকীনাথ বসু এবং তাঁর মাতার নাম প্রভাবতী বসু। তিনি ছিলেন তাঁর মা বাবার নবম সন্তান।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা জীবন
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু পড়াশোনার দিকথেকে প্রচন্ড মেধাবী ও পারদর্শী ছিলেন। তিনি ১৯০২ সালে কটক শহরের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এর পর তিনি ১২ বছর বয়সে কটক শহরের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্যেশে ১৯১৩ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং এখন থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়াও তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে IAS হিসাবে নির্বাচত হয়েছিলেন, কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড দেখে তাঁর মন খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি ১৯২১ সালে এই চাকরি থেকে পদত্যাগ করে দেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক জীবন
১৯২১ সালে নেতাজি গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং গান্ধীজির নির্দেশ অনুযায়ী তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সংঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। কিন্তু পরে কিছু মতভেদের কারণে নেতাজি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে কিছু দিন পরে সুভাষকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় ফলে ফরোয়ার্ড ব্লক একটি স্বাধীন দলে পরিণত হয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মূলত এই দলের মাধ্যমেই স্বাধীনতা সংগ্রামকে তীব্রতর করেছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান
নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের তীব্রতাকে কমানোর জন্য ব্রিটিশ সরকার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে আরো অনেক সংগ্রামীকে কারারুদ্ধ করে ছিলো। ব্রিটিশ সরকারকে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য করার জন্য, নেতাজি জেলে আমরণ অনশন শুরু করেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গৃহবন্দী রাখার নির্দেশ দেন। এরপর ১৯৪১ সালে সুভাষ তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আফগানিস্তান হয়ে জার্মানিতে পৌঁছে যান। এবং সেখান থেকে তিনি জার্মানি ও জাপানের কাছে ভারত থেকে ব্রিটিশ রাজ দূর করার জন্য সাহায্যের আবেদন করেন। এরপর তিনি ১৯৪৩ সালে জার্মানি থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন এবং স্লোগান দেন যে, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। আজাদ হিন্দ ফৌজ ও “দিল্লি চলো” স্লোগানের সাথে তিনি ভারতীয় ঔপনিবেশিক সরকারকে ওপর আক্রমণ করে দেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু
এটা মনে করা হয় যে তিনি ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান কিন্তু তার দুর্ঘটনার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু এখনও বিতর্কের বিষয়।
Frequently Asked Questions (FAQ):
Q.
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছদ্মনাম কি ছিল?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছদ্মনাম ছিল অরল্যান্ডো মাজোট্টা ।
Q. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম কি?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম জানকীনাথ বসু ছিল।
Q. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম কি?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম ছিল প্রভাবতী বসু।
Q.
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মস্থান কোথায়?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মস্থান ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কটকে শহরে।
Q. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীকে কোন দিবস হিসাবে পালন করা হয় ?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
Q.
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্লোগান কি ছিল?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সেরা দুটি স্লোগান হলো
1. “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”
2. “দিল্লি চলো”।
Q. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কবে মারা গিয়েছিলেন ?
এটা মনে করা হয় যে ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র মারা যান।